পার্থেনিয়াম(Parthenium) যেভাবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে

বৈশিষ্ট্যঃ

পত্র অনেকটা  খাঁজযুক্ত, অনেকটা চন্দ্রমল্লিকা গাছের পাতার মত। জন্মের মাঝখানেকের মধ্যেই ফুল ধরে ফুলগুলি সাদা ও ক্ষুদ্রকার। চার মাসের মধ্যে তারা তাদের জীবনচক্র সম্পন্ন করে।এই গাছের একটি গাছ থেকে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘাট জন্ম নিতে পারে। এই অধিক বৃদ্ধির কারণটাই হচ্ছে পার্থেনিয়াম এর দ্রুত বংশ বৃদ্ধির কারণ। পার্থেনিয়ামের বীজ অনেক হালকা হওয়ার কারণে এবং প্যারাসুটের মতো হওয়ার কারণে তা দ্রুত গতিতেই ছড়িয়ে পড়ে  যার ফলে তারা অনেক দ্রুত গতিতে বংশবিস্তার করতে সক্ষম হয়



আরো পড়ুনঃAktaruzzaman who planned the murder of MP Anwarul?

বংশবৃদ্ধিঃ

এদের আদি নিবাস সাধারণত উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর পূর্ব মেক্সিকো এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এই আগাছা আসার ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের  গৃহীত তাদের একটি আইনের নাম পি এল-৪৮০ অর্থাৎ তাদের পাবলিক ল- ৪৮০। সেই সময় যে সকল দেশগুলো উন্নয়নশীল ছিল সেই সকল দেশগুলোকে খাদ্যশস্য সাহায্যের জন্য এই আইনের মাধ্যমে ভারতবর্ষে গম পাঠানো হতো। আমাদের মনে আছে ১৯৪৫ সালের কথা এদের তখনও ঠিকমত খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম হয়ে উঠতে পারিনি ঠিক ঠিক সেই সময় যে সকল গমগুলো আমদানি করা হতো সেই গমের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে পার্থেনিয়াম প্রবেশ করে। মহারাষ্ট্রের  পুণেতে অধ্যাপক এইচ পি পুরাঞ্জপে প্রথম পার্থেনিয়াম গাছের দেখা পান ১৯৫৫-৫৬ সালে।  তবে ইতিহাস অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই ১৮৮৮ সালে দেরাদুনের বন গবেষণার অধ্যক্ষ ডি ব্রান্ডীসের  তৈরি হার্বেরিয়ামে পার্থেনিয়াম আগাছার দেখা পাওয়া যায়।  তবে 1975 সালে এই  আগাছা প্রথম পশ্চিমবঙ্গ ডানকুনি  রেল ইয়ারডে।

বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশসহ ভারতের  সব জায়গাতেই এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ভারতে একমাত্র তাদের একটি রাজ্য রাজস্থান বাদে তাদের বাদবাকি সব কটি রাজ্যেই এই পার্থেনিয়াম এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এদেশে এই পার্থেনিয়াম আগাছাটির অধিকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ হেক্টর।

ব্যবহারবিধি সমূহঃ

দেখা যায় উত্তর আমেরিকার জিকারিলা আপাচি মানুষ তাদের ওষুধ  তথ্য হিসেবে পার্থেনিয়াম ইন কেণাম ব্যবহার করা শুরু করেছিল।(ওপলার ১৯৫৬ঃ৮)। গুয়াউল এর রস( পার্থেনিয়াম আর্জেন্টিতাম)।



আরো পড়ুনঃ Did Raisi Really Die in a Helicopter Crash?

অপকারিতাঃ

পার্থেনিয়ামের পুরো আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। প্রধা্রনত ফুলের রেনুতে অবস্থান করা" সেস্কুটার্পিন ল্যা*কটোন" ( Sesquiter-pene_Lactone বা SQL) জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ" পার্থেনিন "। তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা বিষাক্তকিছু  রাসায়নিক পদার্থগুলি হচ্ছে ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি- অ্যানিসিক অ্যাসিড ইত্যাদি। য়ামাদের ক্ষতস্থানে রক্তের সাথে মিশে চর্মরোগ হয়ে যাই হয়ে যায়। যেমনঃ Contact dermatitis, skin allergy, eczema প্রভৃতি। পার্থেনিয়াম খাবার কারণে মোষ, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া ও ছাগলের মুখে ও পৌষ্টিকনালিতে ঘা, যকৃতে পচন প্রভৃতি রোগের য়াবির্ভাব দেখা দেয়।  আমাদের সেই ফুলের রেনু বা বীজ নাকে ঢুকলেই হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ইত্যাদি হয়। আমাদের খামারের গরু এই আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা/বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়,  এর ফলে দুধ উৎপাদন কমে যায়। পার্থেনিয়াম এর পুষ্পরেনু, বেগুন, টমেটো এর মরিচের মতো সবজি উৎপাদন  বিঘ্ন ঘটায়। আমাদের পরিবেশের মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করার প্রক্রিয়াও বিঘ্ন করে।যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে।  কারণ যদি কোনোভাবে তাদের চামড়ায় এই রস লেগে যায় তাহলে সেখান থেকে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ মৃত্যুরোগেরও সৃষ্টি হতে পারে।

দমনের পদ্ধতিঃ

এই পার্থেনিয়াম দমনে আমাদের উচিত হেক্টর প্রতি  এক থেকে দেড় কেজি আগাছা নাশক মেট্রিবুজিন প্রয়োগ করা। এই আগাছা নাশক ব্যবহার করলে পার্থেনিয়াম গাছ সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়। খাদ্য লবণের ১৫% দ্রবণে “১লিটার পানি এর সাথে ১৫০ গ্রাম লবণ” আগাছার উপর ছিটিয়ে দিলে আগাছা শুকিয়ে যায়। তারপরেই শুকনো পার্থেনিয়ামের আগাছা গুলোতে আগুন ধরিয়ে দিলে সহজেই এগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা যায়।


সতর্কতাঃ

তবে আমাদের এই আগাছা দমন করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা আসলেই জরুরী। সবকিছু করতে হবে আমাদের হাতে রাবারের গ্লাভস বা পলিথিন প্যাকেট বেঁধে ও মুখে পাতলা মাক্স পরে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত।নাহলে বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়েই এই পার্থেনিয়াম আগাছায় হাত দেওয়া দরকার,তা না হলে আমাদের অসুবিধে হতে পারে। আমাদের চারপাশের পরিবেশে যেভাবে এর বিস্তার ঘটছে অনেকটাই অজ্ঞাতসারে।


আশঙ্কা ও করণীয়সমূহঃ


সমগ্র দেশজুড়ে অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভয়ংকর আগাছা। ওনাকাঙ্খিতভাবে উৎপন্ন হয়ে লক্ষ লক্ষ করে ছেয়ে যাচ্ছে দেশের ভূ-ভাগ।

জনগণকে এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন করতে হবে।এর জন্য চিকিৎসক, বিজ্ঞানকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সঙ্গগঠন সহ সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকেও ঠিকমতো গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে, এই পার্থেনিয়ামকে কীভাবে নির্মূল করা যায় সে বিষয়ে। এইসব পদ্ধতি যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা যায় ততই ভালো। যেভাবে এই আগাছাটি দূর্বার গতিতে বিস্তার লাভ করছে তাতে আগামী দিনগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে সেকথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। এই ক্ষতিকর আগাছাটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে ও আগাছাটিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ খুবই জরুরীভাবে গ্রহণ করা উচিত।

নিচে পার্থেনিয়াম আগাছার কিছু ছবি দেওয়া হলোঃ







আপনার জানামতে পার্থেনিয়াম আগাছাটি দমনে আর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?অথবা এমন কোনো তথ্য বা আইডিয়া বা কোনো টিপস আছে কি যেটা আমি উল্লেখ করি নাই?


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Previous Post Next Post
No One Comment On This Post
Comment

Comment On This Post

comment url