খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সর্বদা ভরা পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা এর থেকে বেশি।চিয়া সিডের অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।  এটি আকারে অনেক ছোট হয়  তবে চিয়াসিড এর ভেষজ গুণাগুন অনেক বেশি থাকে। এই বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড এবং বিভিন্ন মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বিদ্যমান আছে।

খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা


আরো পড়ুনঃ Deadly Bite of Russel's Viper

ভূমিকা

চিয়া সিড সাধারণত সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া চিয়া সিড পুদিনা পরিবারের একটি বিশেষ প্রজাতি। এই বীজটি মধ্য আমেরিকা ও বহু প্রাচীন সভ্যতা থেকে একটি সুপার ফুড হিসাবে প্রচলিত হয়ে আসছে। চিয়াসিড এর ভেষজ গুণাগুন বেশি থাকাই এটিকে ভেষজও বলা হয়। যেমন, চিয়া সিডে বাদামের চেয়ে বেশি ওমেগা-3 বিদ্যমান।

এছাড়া দেখা যায় যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম এক গ্লাস দুধে থাকে চেয়ে চিয়া সিডে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি। এছাড়া চিয়াসিডে  অনেক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত। যা একজন মানুষকে প্রচুর পরিমাণে শক্তি যোগাতে সহায়তা করে। খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা


চিয়াসিড এর ভেষজ গুণাগুন 

চিয়া সিড এর পুষ্টিকর উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ,শর্করা,ফাইবার, ফসফরাস,ক্যালসিয়াম, দস্তা, পটাশিয়াম, তামা, প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড সহ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই ,ভিটামিন ডি এবং আয়রন, সালফার, আয়োডিন ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
 
চিয়া সিড এতটাই পুষ্টিকর খাবার যে এতে রয়েছে দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়া্‌ মুরগির ডিমের চেয়ে তিনগুণ বেশি প্রোটিন,সালমন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা বেশি থাকায় শরীরের উপকারের জন্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এইসব খাবার সপ্তাহে প্রতিদিনই খাওয়া যায়।

খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

পুষ্টিবিদদের মতে হৃদ্যোগের ঝুঁকি কমাতে এবং শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে কাজ করে চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩। চিয়া সিড মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেউ অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলতে পারে কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। 

চিয়া সীড আমাদের দেহের বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর জিনিসগুলো বের করে দেয়। এছাড়াও আমাদের শরীরের সকল ধরনের এসিডিটির সমস্যা গুলো দূর করে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে চিয়া সিড দেহের সকল জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় করতে সহায়তা করে।

হাড়ের কাঠামো ভালো রাখতে চিয়াসিডের গুরুত্ব অপরিসীম। যেহেতু চিয়া সিড বিভিন্নভাবে দেহের কোলন পরিষ্কার করে ওই কারণে দেহে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না। চিয়া সিড দেহের চিনির প্রবাহ ঠিক রাখার ফলে ডায়াবেটিসেরও ঝুঁকি নেই বললেই চলে।

আমাদের চেষ্টা করতে হবে সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার অভ্যাস করা। এতে আমাদের শরীরের শক্তি এবং কর্মদক্ষতা বেড়ে যাবে।চিয়াসিড একজন ব্যক্তির শরীরের ওজন হ্রাস করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এটির মধ্যে চর্বি শোষণ করার ক্ষমতা বেশি থাকে।

খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা


কিভাবে চিয়া সিড খাবেন

চিয়া সিডের তেমন কোন স্বাদ বা গন্ধ নেই। রান্না করেও খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সবথেকে ভালো হয় রাতের বেলা চিয়া সিড কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেটা চিয়া সিড সহ পান করা।কারণ খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এছাড়াও আমরা চাইলে বিভিন্ন ধরনের পুডিং, জুস, ওটস, বার্লি, এগুলোর সাথে মিশিয়ে খেতে পারি। 

বিভিন্ন ধরনের সালাদের সাথে অথবা টক দই দিয়েও এটি খাওয়া যায়। চিয়া সিড কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় । তবে সব থেকে ভালো হয় ৫০ থেকে ৬০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাবার আগে চিয়া সিট সহ সেটি খেয়ে নেওয়া।

এছাড়াও আপনারা আপনাদের পছন্দমত এইসব পদ্ধতিতে খেতে পারেন যেমন, কাপ বা দুই কাপ নারকেল পানি অথবা কোন ধরনের ফলের রসের সঙ্গে তিন চা চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে দিয়ে সেটি খেতে পারেন। এছাড়াও দুধের সাথে মিশিয়ে খেলেও ভালো উপকার পাওয়া যাবে। 

চিয়া সিড যেভাবে কিডনি ভালো রাখে

যেহেতু চিয়াসিডে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনসহ ফাইবার এবং ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকে সেজন্য এটি কিডনির জন্য অনেক উপকারী। চিয়াসিড এ বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় এবং উচ্চমাত্রায় বিদ্যমান প্রোটিন কিডনির টিস্যু ঠিক রাখতে সাহায্য করে।এজন্যই বলা হয়ে থাকে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

চিয়া সিড সেই সব মানুষদের জন্য ক্ষতিকর হবে যারা এর মধ্যেই কিডনির সমস্যায় পড়েছে। তাদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ চিয়া সিডে ফসফরাস ও কার্বনের মাত্রা বেশি থাকাই এটি বেশি পরিমাণে খেলে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে। 

কারণ আমরা জানি যদি আমাদের শরীরে ফসফরাসের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে আমাদের হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর জন্য আমাদের হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম(Hyperparathyroidism)  দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আমাদের রক্তনালীতে ক্যালসিয়ামের জমাট দেখা যাবে।অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড খেলে রক্তে পটাশিমের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগ ব্যাধি যেমন আমাদের মাংশপেশীর দুর্বলতা, হৃতপিন্ডের সমস্যাসহ  প্যারালাইসিসও হতে পারে। ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে গেলে আমরা যারা কিডিনির রোগে ভূগছি তাদের হজমে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। এইসময় খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা এর চেয়ে অপকারিতা বেশি হয়।

সেই কারণে আমাদের যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত নিয়মিত রক্তে বিদ্যমান পটাশিয়ামসহ ফসফরাসের পরিমাণ চেক করে নেওয়া ,যাতে চিয়া সিড আমাদের কোনো ক্ষতি না করে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। চিয়া সিড যথাযথভাবে খাওয়ার নিয়মাবলী এবং চিয়াসিড এর ভেষজ গুণাগুন সহ আরো নানান বিষয় অনেক সুন্দরভাবে বোঝানো হয়েছে।

উল্লেখিত আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসলে আপনার বন্ধু ও স্বজনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন এবং একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট আমাদের উৎসাহ প্রদান করে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ওয়েবসাইটে এসে আর্টিকেল পড়ার জন্য

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Previous Post Next Post
No One Comment On This Post
Comment

Comment On This Post

comment url