ফ্রিল্যান্সিং কি?আজ থেকেই কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন
প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং শিখে ঘরে বসে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন।বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সঠিক দিক নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করা ছেড়ে দেই। তাই আজকের পোস্টে আমরা সঠিক উপায় গুলি দেখবো।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত জেনে নিন খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং এর গোপনীয় ১০টি পুষ্টিগুণ
ভূমিকা
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে যে কাজের উপর আপনার বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আছে সে কাজ অনলাইনে অন্যজনকে করে দেয়ার মাধ্যমে তার বিনিময়ে টাকা নেয়া। ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। কারণ এই সেক্টরে কাজ করা লোকেরা স্বনির্ভর। ফ্রেন্ডসিং করে খুব সহজেই সরকারি বা বেসরকারি চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করা যায়।
সাধারণ যেকোনো চাকরি অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আপনি মূলত ঘরে বসেই আপনার ইচ্ছামত কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। ১৯৯৮ সালে ফ্রিল্যান্সিং এর ধারণাটির প্রথম সূচনা হলেও করোনাকালীন সময়ে এই পেশার জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে ।
যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন এবং তারা বেকারত্ব পরিস্থিতির শিকার। এই ফ্রিল্যান্সিং পেশার মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা বেকারত্ব থেকে বের হয়ে আসতে পারছি। বেকারত্বের সমস্যা দূরীকরণে ফ্রিল্যান্সিং আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশা। চলুন জেনে নেই কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন।
ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি অনলাইন এর মাধ্যমে কাউকে কোন কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে যে টাকা পাওয়া যায় সেটাকে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং বলা হয়। ফ্রিল্যান্সিং কাজের মাধ্যমে আমরা স্বনির্ভর হয়ে কাজ করতে পারি। আমরা চাইলে পূর্ণ সময়ের ভিত্তিতেও এইসব কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারি।ফ্রিল্যান্সিং শিখে ঘরে বসে আয় করার বিশেষ কিছু মাধ্যম রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে যেমন,
- ব্লগিংয়ের কাজ,
- গ্রাফিক্স ডিজাইন,
- ওয়েব ডিজাইন,
- ডিজিটাল মার্কেটিং,
- মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট,
- ইউটিউব মার্কেটিং,
- কোডিং প্রোগ্রামিং,
- ডেভেলাপিং প্রফেশনাল এসিও,
- ক্যাড ও থ্রিডি মডেল
ফ্রিল্যান্সিং কোর্স
বর্তমানে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে মূলত বেকার মানুষদের ফ্রিল্যান্সিং করতে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্নভাবে বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর কোর্স গুলি প্রদান করে থাকেন। অনলাইন এবং অফলাইন দুইভাবেই এই কোর্সগুলি করা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করার পরে সবাইকে সার্টিফিকেট, এবং সেই সাথে সেই প্রতিষ্ঠানগুলিতে যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি করার সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। সরকারি ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারগুলি সার্টিফিকেটের সাথে প্রদান করে থাকে। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি। করতে চাইলে তরুণ প্রজন্মকে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং উৎসাহিত করতে হবে।
আমরা চাইলে বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার অথবা মোবাইল এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং কোর্সগুলোতে অংশ নিতে পারি। ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করার পরে নিজেরাও অন্যকে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়ে ঢাকা উপার্জন করতে পারি।
ফ্রিল্যান্সিং করতে যেসব ডিভাইসের প্রয়োজন হয়
অনলাইনেই ফ্রিল্যান্সিং করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম, ওয়েবসাইট এবং রিসোর্স কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে আয় করার সুযোগ তৈরি করে নিতে পারব।একটি কম্পিউটারের৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং ভালো বাজেট থাকলে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে একটি ল্যাপটপ কিনে ফেলতে হবে।
এরপর আমাদের প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে শিখে যেতে হবে। আপনার যদি এই বিষয়ে কাজ করার ইচ্ছা বেশি থাকে তাহলে আপনি খুব ভালোভাবেই এই বিষয়গুলা রপ্ত করতে পারবেন। প্লানচিং করার জন্য আপনার ল্যাপটপের বা কম্পিউটারের প্রসেসর দুই গিগাহার্জ অথবা তার বেশি হওয়া লাগবে। এবং আপনার কম্পিউটারের মেমোরিটি এসএসডি হতে হবে।
ফ্রান্সিং শেখার জন্য আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েই পড়াশোনা করতে হবে অথবা ইংলিশ ভালো জানতে হবে বিষয়টি এমন না। আপনার ফ্রিল্যান্সিং শেখার ইচ্ছা শক্তি আপনাকে দক্ষ করে তুলবে এবং সেই সাথে সাথে আপনার ইনকাম করার সুযোগ করে দিবে। ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হল নিজের ইচ্ছাশক্তি।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
আপনার কি ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য কম্পিউটার নেই? জেনে রাখুন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য একটি মোবাইল হলেই যথেষ্ট। যদি কেউ ভাবেন আপনার কম্পিউটার না থাকার কারণে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন তাহলে আপনাদের জন্য একটি সুসংবাদ হচ্ছে আপনি আপনার মোবাইলটি দিয়ে সব ধরনের ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যে সকল শর্তগুলি মেনে চলতে হবে
- যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন,
- ফ্রিল্যান্সিং সাইট বেছে নিতে হবে,
- যে দক্ষতায় ফ্রিল্যান্সিং করবেন,
- মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সাইট বেছে নেওয়া
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা
মোবাইল ফোনে ফ্রিল্যান্সিং করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটা অতিরিক্ত কোন বোঝা মনে হয় না। আমরা যেখানে সেখানে সর্বত্রই আমাদের মোবাইল সাথে করে নিয়ে যায় খুব সহজেই। কিন্তু আমরা চাইলেই ল্যাপটপ সর্বত্র গ্রহণ করতে পারি না। আমরা যে কোন জায়গা থেকে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য মোবাইল বেছে নিতে পারি।
সহজে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করার মাধ্যমে আমরা নতুন হিসাবে আমরা বিনামূল্যে ক্যানভা বা অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন গুলো মোবাইলের সাহায্যে দারুন ভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারি। তাই বলা যায় মোবাইলের সাহায্যে ঘরে বসে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি গুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।
জনপ্রিয় ও লাভজনক ফ্রিল্যান্সিং কাজ
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন সেটার জন্য আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোন কাজগুলো বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং শিখে ঘরে বসে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি তাদের কাজ বা সার্ভিস এবং প্রজেক্ট করিয়ে নেওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে চলে আসে।
তবে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলোর খুব বেশি চাহিদা এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং লাভজনক কাজ।
সেগুলো হলোঃ
১. Content Writing
এখন যেকোনো ধরনের বিজনেস কোম্পানি তাদের সার্ভিস বা প্রোডাক্ট প্রমোশন এর জন্য একজন দক্ষ আর্টিকেল রাইটার এর খোঁজ করেন. এই কাজের অনেক চাহিদা রয়েছে এবং কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে অনেক ডলার ইনকাম করা সম্ভব। প্রত্যেকটি আর্টিকেল লিখে দেওয়ার বিনিময়ে আপনি $10-$20 আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি আপনার কনটেন্টের উপর ভিত্তি করে এর থেকেও বেশি ডলার আয় করতে পারবেন।ফ্রিল্যান্সিং জগতে অনেক কাজ রয়েছে যেগুলোর প্রচুর চাহিদা রয়েছে ।
২. Web designing
যেকোনো ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা যেকোনো কোম্পানি তাদের Website design করিয়ে নিতে চাই। তাই তারা একটি উন্নত মানের Website design করে নেয়ার জন্য একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খোঁজ করে থাকেন। Website design এর কাজ করার মাধ্যমে লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
৩. Graphics designer
Graphic designer একটি কঠিন কাজ হলেও এটির মাধ্যমে সব থেকে বেশি টাকা আয় করা যায়। যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ডের জন্য একটি ইউনিক লোগো বা Graphic designer করার জন্য দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের খোঁজ করে থাকেন।
অতএব একজন ফ্রিল্যান্সার এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে এই কাজ করার মাধ্যমে আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন।
৪.Digital Marketing: বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা সব থেকে বেশি। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন কোম্পানিগুলো তাদের সার্ভিসগুলোকে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজন হয়। এবং সেগুলোর জন্য তারা ফ্রিল্যান্সারদের খোঁজ করেন।
এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে আপনি খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করার সুযোগ পাবেন।
৫. Animation
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট ক্রিকেটাররা অ্যানিমেশন বানিয়ে নিতে চাই।আপনি যদি Animation এর কাজ জানেন তাহলে Animation বানিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমেশন বানিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন।
৬. App Developer
বর্তমানে অনেকেই অ্যাপ তৈরি করে তাদের নিজস্ব android apps দিয়ে টাকা আয় করে থাকে।অনেকেই সুন্দরভাবে তাদের কাজটি করিয়ে নিতে দক্ষ freelancer দের খোঁজ করে থাকেন।একজন দক্ষ App developer হওয়ার মাধ্যমেও আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসে আয় করার সুযোগ পাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা তোলার নিয়ম
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করবেন এবং কোন কোন ভালো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করবেন।ধরেন আপনি fiverr, Upwork, Guru এইসব মার্কেট ব্যবহার করছেন।
যখন কোন কোম্পানি বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এসে কোন কাজ দিয়ে যায় বা কাজ করানোর জন্য পোস্ট করে তখন তার থেকে মার্কেটপ্লেসগুলো সেই কাজের বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সারদের টাকাটা আগেই নিয়ে নেয়।
এরপর আপনি যখন সেই কোম্পানি বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি সম্পন্ন করেন তখন আপনাকে মার্কেটপ্লেস সেই টাকাটা দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসগুলো সামান্য কিছু চার্জ কেটে আপনাকে দিয়ে দেয়। এটাকে সার্ভিস চার্জও বলা যায়।
এখন আপনার উপার্জিত এই টাকাগুলো আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সার একাউন্ট থেকে উঠানোর জন্য আপনাকে PayPal বা Bank Transfer সহ আরো কিছু কিছু মাধ্যমে তুলে নিতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন ফ্রিল্যান্সিং শিখে ঘরে বসে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কিভাবে খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা যায়। একজন সফল ফ্রিল্যানসার হওয়ার সকল ধাপ ও নিয়মাবলী সহ আরো নানান বিষয় অনেক সুন্দরভাবে বোঝানো হয়েছে।
উল্লেখিত আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসলে আপনার বন্ধু ও স্বজনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন এবং একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট আমাদের উৎসাহ প্রদান করে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ওয়েবসাইটে এসে আর্টিকেল পড়ার জন্য।
Comment On This Post
comment url