মাত্র ৫টি উপায়ে কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন
কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন এই নিয়ে অনেকই প্রায় চিন্তিত থাকেন।সেটার একটি প্রধান কারণ হলো শরীরের অতিরিক্ত মেদ। অনেকেরই কর্মব্যস্ততা এবং সময়ের অভাবে আলাদা করে জিমে যাওয়ার সময় হয় না। কিন্তু আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে জিমে না গিয়েও ঘরোয়া কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর উপায় আছে।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ভূমিকা
আমাদের আমাদের সকলেরই শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর উপায় জানা অত্যাধিক প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্বের অনেক মানুষ পেটের অতিরিক্ত চর্বির সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এইটাকে তারা গুরুত্ব সহকারে না দেখে অনেক হেলা করে দেখেন। এটাই দিন দিন অনেক ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শরীরের অতিরিক্ত মেদ আমাদের বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়াই।
শরীরের অতিরিক্ত মেদ যেমন আমাদের শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট করে তেমনি আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইয়ের কারণও হয়ে যায়।কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন এ নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের নিয়ম মেনে চলতে বলে। এতে অতিরিক্ত অতিরিক্ত ডায়েট করার ফলে আমাদের হিতে বিপরীত হয়ে যায়।
আমরা যদি এই আর্টিকেলটি পড়ি তাহলে ঘরে বসেই শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর উপায় জানতে পারবো এবং খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের ফিটনেস ধরে রাখতে পারব।
এবার আমাদের দেখতে হবে যে আমরা কিভাবে আমাদের পেটের মেদ কমানোর উপায় পেটের মেদ কমানোর জন্য কি কি করতে পারি
পেটের চর্বি কেন বিপদজনক
পেটের মেদ বা ভুড়ি বলতে বোঝাই যেটা আমাদের তলপেটে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমে থাকে। এটা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত জনের জন্য দায়ী। কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন সেটা জানার জন্য প্রথমে জানা জরুরী আমাদের শরীরে কোন কোন ধরনের ফ্যাট বা চর্বি থাকে।
সাধারণত আমাদের শরীরে তিন ধরনের ফ্যাট বা চর্বি থাকে। সেগুলো হচ্ছেঃ
- ভিসারাল ফ্যাট
- ইন্ট্রা মাসকুলার ফ্যাট
- সাবকিউটেনিয়াস ফ্যাট
আমাদের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই ত্বকের নিচের স্তরের দিকে শরীরের প্রায় ৯০% চর্বি থাকে। সাবকিউটেনিয়াস ফ্যাট হচ্ছে আমাদের পেটে খোঁচা দেয়ার সময় আমরা যে চর্বিটি অনুভব করি সেটি। এবং বাকি যে ১০% চর্বি তাকে বলা হয় ভিসারাল ফ্যাট বা আমাদের পেটের অভ্যন্তরীণ চর্বি যেটা আমাদের নাগালের বাইরে থাকে।
পেটের চর্বি ভিসারাল ফ্যাট নামেও পরিচিত যেটা আমাদের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসকরা সাধারণত এই ভিসারল ফ্যাটকেই আমাদের শরীরের পেটের চর্বি হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। এই ভিসারাল ফ্যাট সাবকিউটেনিয়াস ভ্যাটের থেকেও বিপদজনক হয়ে থাকে। পেটের চারপাশে ভিসারাল ফ্যাট বহন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ Deadly Bite of Russell's Viper
শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর উপায়
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করাঃ বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই জাঙ্ক ফুড খেতে পছন্দ করে। বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া্ ফাস্টফুড, এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকে। এইসব অতিরিক্ত খাবার মানুষের শরীরের ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে পেটের মেদ বাড়তে থাকে। সেজন্য আমাদের জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
দুশ্চিন্তা পরিহার করাঃ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অনেক ভয়ঙ্কর একটি রোগের নাম দুশ্চিন্তা।কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন।মানুষ যখন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভোগে তখন আমাদের দেহের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে একপ্রকার হরমোন তৈরি হয় যেটা আমাদের যকৃত থেকে চিনি নিঃসরণ করে। যা পেটের চর্বি বৃদ্ধিতে দায়ী।
শারীরিক পরিশ্রম করাঃ বর্তমানে যন্ত্রপাতির ব্যবহার যেমন আমাদের আরাম দিয়েছে, ঠিক তেমনি আমাদেরকে আরো অলস প্রকৃতির করে তুলেছে। এর ফলে মানুষ দিন দিন অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় আমরা যেখানে হেঁটে হেঁটে চলাফেরা করতাম সেখানে এখন রিকশা বাস অথবা অন্যান্য যানবাহনের ব্যবহার নিয়ে থাকি।
এছাড়াও আমরা সিঁড়ির বদলে বর্তমানে লিফট ব্যবহার করছি। সিঁড়িতে উঠানামা করার ফলে আমাদের শরীরের যে পরিশ্রম হতো সেটুক আর হচ্ছে না।ফলে মেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিয়মিত ঘুমঃ আমরা আমাদের পড়াশোনা অথবা বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মের জন্য অধিকাংশেরই নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস নেই। এছাড়া আমরা অনেকেই রাত জেগে কাজ করি। রাত জেগে কাজ করার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয় এবং আমাদের ক্ষুদা বাড়িয়ে দেই।
ক্ষুদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের খাদ্য তালিকায় আরো খাবার যোগ হয়। সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে রাতে দ্রুত ঘুমানোর এবং সকালে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠা।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর উপায়
লেবু পানিঃ সকালবেলা খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে লেবু পানি খেতে হবে।এক গ্লাস কুসুম গরম পানির মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে এবং সাথে এক চামুচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে।।অতিরিক্ত মেদ কমাতে এটি অনেক কার্যকরী।
আদা পানিঃ আদা শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে অনেক সাহায্যকারী।এক কাপ কুসুম গরম পানিতে কিছু আদা মিশিয়ে দিয়ে খেলে এটি আমাদের অতিরিক্ত ফ্যাট কমিয়ে দেয়।
গ্রিন টিঃ শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমানোর জন্য অনেক জনপ্রিয় একটি পানীয় হচ্ছে গ্রিন টি।যেটা অনেক সহজেই আমাদের ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে থাকে।আমাদের প্রতিদিন ঘুমানোর আগে গ্রিন টি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
যারা কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা এইসব মেনে চললে খুব শীঘ্রই আপনাদের মেদ কমে যাবে।
মেদ কতটুকু কমানো দরকারঃ
আমাদের শরীরের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে আমাদের শরীরের কতটুকু ওজন শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় সেটি নির্ণয় করে দেয় বডি মাস ইনডেক্স। বডি মাস ইনডেক্স কিভাবে বের করে/বডি মাস ইনডেক্স বের করার নিয়ম হচ্ছেঃ
- ওজন মেপে নিতে হবে
- আমাদের উচ্চতা মেপে এটাকে মিটার স্কেলে কনভার্ট করতে হবে
- এরপর আমাদের ওজনকে উচ্চতার স্কয়ার দ্বারা ভাগ করতে হবে
ধরি, আমার ওজন ৮০ কেজি এবং উচ্চতা ১.৮ মিটার। তাহলে আমার বিএমআই BMI হবে (Body Mass Index) = ৮০/(১.৮*১.৮) = ২৪.৬৯।
কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন কতটূকু কমাবেন সেটি জানার জন্য এইটি একটি অনেক কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানোর উপায়ঃ
আপনি যদি জানতে চান কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন তাহলে ব্যায়ামের মতো দ্রুত কার্যকরী বিকল্প কিছুই নেই।উপরে বর্ণিত সকল কিছু মেনে চলার পাশাপাশি আপনাকে রেগুলার ব্যায়াম করাই লাগবে।নিচে কিছু সহজ ব্যায়ামের পদ্ধতি দেওয়া হলোঃ
- লেগ রেইজ ব্যায়াম (leg raise exercise)
- শুরুতে আমাদের মাটিতে শুয়ে হাত দুটো আমাদের শরীরের পাশে টান টান করে রাখতে হবে।
- আমাদের দুই পা জোড়া করে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে ও প্রায় ৯০ ডিগ্রি করে সোজা তুলে রাখতে হবে।
- এরপর আমরা নিঃশ্বাস নিতে নিতে পা জোড়া অবস্থায় নামাবো
- এ সময় লক্ষ রাখব কোমর ,পিঠ বা মাথা যেন মাটি থেকে একটুও না উঠে
- একইভাবে ১০ বার করার পর একটি সেট সম্পূর্ণ করব।
- শুরুতে এটি দুইবার করে করার পর পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বাড়াবো
২) ক্রাঞ্চেস ব্যায়াম(Crunches exercise)
৩) সিট আপস ব্যায়াম(Sit Ups Exercise)
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন মাত্র ৫টি উপায়ে কিভাবে ঘরে বসেই আপনার শরীরের মেদ কমাবেন। ঘরোয়া ভাবেই কিভাবে খাওয়া দাওয়া এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখবেন এইসব বিষয় সহ আরো নানান বিষয় অনেক সুন্দরভাবে বোঝানো হয়েছে।
উল্লেখিত আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসলে আপনার বন্ধু ও স্বজনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন এবং একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট আমাদের উৎসাহ প্রদান করে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ওয়েবসাইটে এসে আর্টিকেল পড়ার জন্য
Comment On This Post
comment url