দ্রুত জেনে নিন খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং এর গোপনীয় ১০টি পুষ্টিগুণ

সুমিষ্ট এবং স্বাদে অতুলনীয় হিসেবে খেজুর বেশ পরিচিত একটি ফল।খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হচ্ছে দিনে অন্ততপক্ষে দুটি খেজুর খেলে তার কাছে কোন রোগ ভিড়তে পারেনা। খেজুরের বিভিন্ন পুষ্টি ও ভেষজ গুনাগুণ গুলো হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ,  ভিটামিন ডি, আয়রণ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট।

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার এইসব গোপনীয় উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি জানেন কি?

ভূমিকা

বহু বছর আগে থেকেই খেজুর চাষের কাজ চলে। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই খেজুর অনেক বেশি চাষ করা হয়। খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে।বাংলাদেশে সাধারণত রমজান মাসে খেজুর ছাড়া ইফতারের অসমাপ্ততা থেকে যায়। ধর্মীয় দিকের পাশাপাশি রোজা রেখে সারাদিনের প্লেন্টি দূর করতে খেজুর বেশ কার্যকরী একটি ফল।

বাংলাদেশের পটুয়াখালী, নোয়াখালী, খুলনা, বরিশাল,যশোর,লালমাই পাহার এলাকা ও মধুপুর গড়ে বেশি পরিমাণে খেজুর গাছ এবং প্রায় সর্বত্রই কম বেশি দেখা যায়। এদেশে ৬৮. ১০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে খেজুরের গাছ জন্মে। বাংলাদেশ প্রায় ৬ কোটি ৬৭ লক্ষের বেশি খেজুরের গাছ রয়েছে এবং এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ স্ত্রী গাছ হয়। 

খেজুর গাছে ফল আসতে প্রায় চার থেকে আট বছর সময় লেগে যায়। সাধারণত স্ত্রী কাছেই ফুল এবং ফল হয়। কাঁচা অবস্থায় ফল সবুজ এবং পাকার পর খয়রি লাল বর্ণ ধারণ করে।খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি এবং খেজুর বিভিন্ন পুষ্টি ও ভেষজ গুনাগুণ দ্বারা ভরপুর।

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা


খেজুরের ধর্মীয় মর্যাদাপূর্ণ দিক

আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফে ২০ বার খেজুরের বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। সর্বপ্রথম খেজুর পাতায় পবিত্র কোরআন শরীফ লিখা হয়েছিল। অন্যান্য ফলের তুলনায় খেজুর ছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রিয় খাবার।তিনি খেজুর দিয়ে রমজানের ইফতার করার পরামর্শ দিতেন এবং খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক ধারণা দিয়েছেন।

খেজুর গাছের উপকারিতা

খেজুরের কান্ড,পাতা,বীজ এবং আঠার বিভিন্ন ধরনের উপকারী গুণাগুণ রয়েছে। পুরনো গাছের চিলেপাতা নামের পরগাছা বিভিন্নভাবে ভেষজ গুণসম্পন্ন। খেজুর গাছের কাণ্ডের আঠা পাতলা পায়খানা এবং প্রসবের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। খেজুর গাছের শিকড় হতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি হয়। কাণ্ড পাতা জ্বালানি হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।

খেজুরের গাছের কান্ড, তক্তা, খুঁটি, রোয়া, বাটাম তৈরি সহ বিভিন্নভাবে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খেজুরের পাতা দিয়ে চাটাই, পাটি, মাদুর ইত্যাদি বানানো হয়। খেজুর গাছের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি, ভিনেগার, মিশ্রি ,পায়েস, ক্ষীর,চিনি, গুড় ইত্যাদি জিনিস বানানো হয়ে থাকে।

যশোর এবং ফরিদপুরে খেজুর গুড়ের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। খেজুর গাছ পরিবেশের সুরক্ষা প্রদান সহ মাটির ক্ষয় রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা আমাদের ক্ষেতের আইলে অথবা রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগিয়ে অনেক টাকা আয় করার পাশাপাশি আমাদের খেজুরের বিভিন্ন পুষ্টি ও ভেষজ গুনাগুণ এর চাহিদা পূরণ করতে পারি।

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা


খেজুরের উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর যেমন ভালো থাকে পাশাপাশি আমাদের চুল এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও খেজুর অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। গবেষকদের মতে, সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি।খেজুরের বিভিন্ন পুষ্টি ও ভেষজ গুনাগুণ এর অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্লন করে।

খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা


মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে খেজুর

আইসোমারটাইট, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ও ফেনোলিক যৌগ খেজুরে বিদ্যমান এমন এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটা আমাদের  মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এইসব যৌগের দ্বারা আমাদের মস্তিষ্কের কোর্স গুলি ফ্রি মেডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারতো।

খেজুরে বিদ্যমান থাকা ভিটামিন বি আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, আয়রণ ও পটাশিয়ামের মত খনিজ পদার্থ মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সক্রিয় রাখতে এবং নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকরিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে খেজুর

রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীর জন্য খেজুর খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন দরকার হয় তার প্রায় ১১ ভাগের যোগান দেয় খেজুর।খেজুরে বিদ্যমান থাকা আইরন প্রতি দুইশ গ্রামে প্রায় ১.৮ মিলিগ্রাম।আয়রন এর ঘাটতি থাকলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা যায়।খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা বেশী থাকায় এটি খালি পেটে খাওয়া উত্তম।

হার্টের সমস্যা দূরীকরণে খেজুর

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হচ্ছে খালি পেটে খেজুর খেয়ে নিলে হাটের সমস্যা দূর হয়ে যায়। আমরা যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছি তারা খালি পেটে খেজুর খেয়ে ভালো ধরনের উপকার পাবো। উচ্চ LDL হৃদরোগের ঝুঁকির একটি প্রধান কারণ প্রধান কারণ।

খেজুরে থাকা ফাইবার  LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।খেজুরে বিদ্যমান সোডিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও খেজুরে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম, অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলি আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আমাদের সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে খেজুর

খেজুর ভাইবারের একটি ভালো উৎস হওয়ার কারণে কোলনের স্বাস্থ উন্নত করতে এবং করুন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এছাড়াও খেজুরের এন্টিইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। খেজুরে বিদ্যমান থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে

এছাড়াও ক্যান্সার কোষগুলোকে চিহ্নিত করে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে এইসব ভিটামিন এবং খনিজ। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য খেজুর একমাত্র উপায় নয়। এছাড়াও ঝুঁকি কমাতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি আমাদের ব্যায়াম এবং ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

খুশখুশে কাশি থেকে মুক্তি পেতে খেজুর

আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের বিপরীতে লড়াই করে খেজুরে থাকা কিছু এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের শ্বাস যন্ত্রের প্রদাহ কমাতে এবং স্লেশা ঝিল্লির বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা দেয়। এগুলা খুসখুসে কাশির একটি বিরাট কারণ।

তাছাড়া খেজুর খাওয়ার ফলে আমাদের গলার ব্যথা এবং গলায় যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং গলা শান্তি হয়।তাছাড়া খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি হয় যদি রাতের বেলা দুইটি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি সহ খেজুর খেলে। এভাবে নিয়মিত খেলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই গলায় শান্তি আসবে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খেজুরের উপকারিতা

খেজুরে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ভিটামিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ফাইবার জাতীয় পদার্থ গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য কাজ করে। তাছাড়া খেজুর গর্ভাবস্থায়ী নারীর উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ওসবের বেদনা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে নিরাময় দেয়।

এছাড়াও খেজুর খাওয়ার ফলে মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তবে গর্ভবতীদের খেজুর খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খেলে শর্করার মাত্রা এবং ওজন দ্রুত বেড়ে যায়। তাই মেয়েরা খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা বেশী থাকায় প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি খেজুর খেলে এটা থেকে অনেক উপকার পাবে।

পুরুষদের জন্য খেজুরের গুরুত্ব

খেজুর খেলে পুরুষদের ক্যান্সার, আলঝাইমার, এবং হৃদরোগ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খেজুরে বিদ্যমান থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  বৈশিষ্ট্যের জন্য দীর্ঘদিন ধরে থাকার রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। তাছাড়া খেজুরে বিদ্যমান থাকা একটি অক্সিডেন্টের বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিসের সাথে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। 

এই ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ আপনার শরীরের জন্য অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যায় এবং রক্তের শর্করার মাত্রা আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা  হচ্ছে এটার কার্যকরি ভূমিকা বেশি থাকে।খেজুরের বিভিন্ন পুষ্টি ও ভেষজ গুনাগুণ যৌনশক্তি বাড়ায়।

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে খেজুর

খেজুরে যেসব ফাইবার থাকে সেগুলা স্থুলতা ও বন্ধ্যাতের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।  ফুলের পরাগরেণুতে যেসব বোরন থাকে সেগুলো টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়। যদি স্পার্ম কাউন্টার লো হয় বা যারা এই সমস্যায় ভোগে তারা নিয়মিত এই ফল খেতে পারেন। খেজুর খাওয়ার ফলে শুক্রাণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

এসিডিটির জন্য যাদের যৌনশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের এই সমস্যাও কমিয়ে দেয় খেজুর। যৌনশক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম বরণ কারণ শরীরে নানা ধরনের রোগ বালাইয়ের সংক্রমণ। এই রোগ বালাই থেকে আরোগ্য লাভ করতে সহায়তা করে খেজুর যাতে যৌনশক্তি বেড়ে যায়।অপরদিকে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশী।

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে খেজুর


লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং এর গোপনীয় ১০টি পুষ্টিগুণ। খেজুর যথাযথভাবে খাওয়ার নিয়মাবলী এবং খেজুরের বিভিন্ন পুষ্টি ও ভেষজ গুনাগুণ সহ আরো নানান বিষয় অনেক সুন্দরভাবে বোঝানো হয়েছে।

উল্লেখিত আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসলে আপনার বন্ধু ও স্বজনদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন এবং একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট আমাদের উৎসাহ প্রদান করে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ওয়েবসাইটে এসে আর্টিকেল পড়ার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Previous Post Next Post
No One Comment On This Post
Comment

Comment On This Post

comment url
https://www.cpmrevenuegate.com/qy07gvqxte?key=99b257f6b797ecc549dc646d2fc7f361